Windows 10 সাপোর্ট সার্ভিস বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে কি করবো?
![]() |
Windows 10 Operating System Image Source: Flickr |
বিষয়সূচীঃ
আগে আপনার কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেমকে চিনুনঃ
আপনার কম্পিউটারে কোন অপারেটিং সিস্টেম ইনস্টল করা আছে? যদি জানা না থাকে তাহলে নীচের ছবিটি দেখুন। যদি আপনার কম্পিউটার খোলার পরে মোটামুটি এই দৃশ্য চোখে পড়ে তাহলে বুঝতে পারবেন আপনার ল্যাপটপে Windows 10 ইনস্টল করা আছে।
![]() |
Windows 10 Image from Windows blog |
কোন আপারেটিং সিস্টেম আপনার কম্পিউটারে ইনস্টল করা আছে জানার টেকনিক্যাল পদ্ধতিঃ
এছাড়া টেকনিক্যালি আপনার PC-তে (ডেক্সটপ অথবা ল্যাপটপে) কোন আপারেটিং সিস্টেম ইনষ্টল আছে সেটা জানার জন্যে নীচে লেখা পদ্ধতি অনুসরণ করুন -
(1) কম্পিউটার পুরোপুরি অন হওয়ার পরে আপনার কি-বোর্ডে থাকা Windows এবং R বোতাম দুটি একসঙ্গে টিপুন।
![]() |
Image source: wikiHow |
(2) এরপরে Run উইন্ডোতে টাইপ করুন winver এবং OK বোতামে ক্লিক করুন।
(3) এবার আপনি আপনার PC-এর স্ক্রীনে বা মনিটরে দেখতে পারবেন যে কোন অপারেটিং সিস্টেম আপনার কম্পিউটারে ইনস্টল করা আছে।
Windows 10 নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ খবরঃ
যদি আপনার কম্পিউটারের স্ক্রীনে বা মনিটরে এইরকম Windows 10 লেখা একটি উইন্ডো বা বক্স দেখায় তাহলে বুঝতে হবে আপনার ডেক্সটপ অথবা ল্যপটপে Windows 10 অপারেটিং সিস্টেম ইনস্টল করে রাখা আছে। আর যেহেতু আপনার PC-তে Windows 10 আপারেটিং সিস্টেম আছে, তাহলে আপনি নিশ্চয় খবর পেয়েছেন যে 2025 সালের অক্টোবর মাসের 14 তারিখের পর থেকে Windows 10 আপারেটিং সিস্টেমের জন্য সাপোর্ট সার্ভিস বন্ধ হয়ে যাবে। এখন কেন সাপোর্ট সার্ভিস বন্ধ হয়ে যাবে, সাপোর্ট সার্ভিস বন্ধ হওয়ার পরে কি হবে এবং তারপরে কি করতে হবে সেসব বিষয়ে নিয়ে এই ব্লগে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
উইন্ডোজ আপডেট সার্ভিস কি?
আপনি যদি একটি অরিজিনাল উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম ব্যাবহার করে থাকেন তাহলে মাইক্রোসফট উইন্ডোজের পক্ষ থেকে একটি নিদির্ষ্ট সময় অন্তর অন্তর সুরক্ষা সহ প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ধরনের আপডেট পাঠানো হয়।
বিভিন্ন ধরনের আপডেটঃ
সিকিওরিটি আপডেটঃ
আপনার কম্পিউটারের উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ প্রোগ্রামিং ফাইল থাকে যা অপারেটিং সিস্টেমকে পরিচালনা এবং সুরক্ষা প্রদান করে। অসাধু হ্যাকাররা (এরা ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার নামে পরিচিত) এই অপারেটিং সিস্টেমের দুর্বলতাগুলি খুঁজে বের করে। কোনো কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেমের সুরক্ষা দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকাররা ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনলাইনে বিভিন্ন ওয়েবসাইট, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ, ইমেল, মেসেজ ইত্যাদির মাধ্যমে কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেমে হানা দেয়। ফলে সেই আক্রান্ত কম্পিউটারটি প্রায় সম্পূর্ণভাবে হ্যাকারদের কবজায় চলে যায় এবং কম্পিউটারে স্টোর থাকা ব্যাক্তিগত এবং অনান্য বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলি হ্যাকাররা হাতিয়ে নেয়।
মাইক্রোসফট উইন্ডোজের পক্ষ থেকে আপনার উইনোডজ আপারেটিং সিস্টেমে আপডেটের মাধ্যমে বিভিন্ন প্যাচ ফাইল এবং প্রোগ্রাম পাঠানো হয় যেগুলো অটোমেটিকালি কম্পিউটারে ইনস্টল হওয়ার পরে আপনার কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেমের দুর্বলতাগুলি সংশোধন হয় এবং হ্যাকারদের আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পায়। কিন্তু এই সংশোধন চিরস্থায়ী হয় না। কারণ হ্যাকাররা পুনরায় অপারেটিং সিস্টেমে সুরক্ষার ফাঁক খুঁজে পায় এবং আক্রমণ করে। ফলে অপারেটিং সিস্টেমকে ক্রমাগত সুরক্ষা দেওয়ার জন্যে উইন্ডোজের সিকিওরিটি আপডেট প্রক্রিয়া চলতে থাকে।
সিস্টেম অ্যাপ্লিকেশন আপডেট
আরেক ধরনের আপডেট আসে যেগুলির মাধ্যমে আপনার উইন্ডোজ আপরেটিং সিস্টেমে ইন্সটল থাকা বিভিন্ন প্রোগ্রামে( যেমনঃ ক্লক, ক্যামেরা, ভয়েস রেকর্ডার, ক্যালকুলেটার ক্যালেন্ডার, এজ ব্রাউজার ইত্যাদি) নতুন লুকস এবং নতুন ফিচার যুক্ত হয়।
ড্রাইভার আপডেটঃ
অনান্য আপডেটগুলির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো ড্রাইভার আপডেট। কম্পিউটারে ভেতরে এবং বাইরে যেসব হার্ডওয়্যার বা ডিভাইস লাগানো হয় সেগুলোকে ঠিকভাবে কাজে লাগানোর জন্য কম্পিউটারের ড্রাইভারের প্রয়োজন হয়। যেমন কম্পিউটারে ওয়েবক্যাম, সিসিটিভি, প্রিন্টার ইত্যাদির জন্যে ড্রাইভার ইনষ্টল করতে হয়। উইন্ডোজ 10 এবং 11 অপারেটিং সিস্টেম থাকা কম্পিউটারে ইন্টারনেট কানেকশন থাকলে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ড্রাইভার কম্পিউটার নিজেই আপডেট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ইনষ্টল করে নেয়। ফলে আলাদা করে ম্যানুয়ালী ড্রাইভার ইনষ্টল করার ঝামেলা থাকেনা।
ডিভাইসের কার্যক্ষমতা বাড়ানো আরো সুরক্ষা দেওয়ার জন্যে কম্পিউটারের ডিভাইস ড্রাইভার আপডেট হয়। তবে এক্ষেত্রে নিয়মিত আপডেট হয়না, দীর্ঘদিন পরে আপডেট হয়। তবে উইন্ডোজ আপডেট সিস্টেম ছাড়াই ম্যানুয়ালি ড্রাইভার আপডেট করা যায়।
উইন্ডোজ আপডেট সার্ভিস বন্ধ হয়ে গেলে কি হবে?
কেন উইন্ডোজ আপডেট গুরুত্বপূর্ণ সে বিষয়ে আমরা ইতিমধ্যে আলোচনা করেছি। এটি মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ সাপোর্ট সার্ভিসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কম্পিউটারে উইন্ডোজ আপারেটিং সিস্টেম আপডেট না পেলে যেসব সমস্যার মুখে পড়তে হবে সেগুলি নিয়ে নীচে আলোচনা করা হলো-
(1) উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে থাকা দুর্বলতার সংশোধন হবে না। লেটেস্ট সিকিওরিটি প্যাচ দ্বারা আপডেট না হওয়ার ফলে, সিস্টেম ফাইল বা প্রোগ্রাম গুলি ক্ষতিকারক ভাইরাস, ম্যালওয়ার দ্বারা সহজেই আক্রন্ত হয়ে যাবে।
(2) সহজেই আপনি হ্যাকিংয়ের শিকার হয়ে যাবেন। হ্যাকাররা আপনার গুরুত্বপূর্ণ এবং গোপনীয় ডেটা হাতিয়ে নিতে পারে। আপনার কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেমের ফাইল তারা এনক্রিপডেট করে ব্ল্যাকমেল করতে পারে।
(3) নতুন সফটওয়্যার সহজে ইনস্টল করতে পারবেন না। সফটওয়্যার কম্পিটিবিলিটির সমস্যা দেখা দেবে। আবার সফটওয়্যার ইনষ্টল করতে পারলেও ঠিকমতো চালাতে পারবেন না। সফটওয়্যার ক্রাশের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।
(4) কম্পিউটারের হার্ডওয়্যারগুলি ঠিকমতো কাজ করতে পারবে না। ফলে কম্পিউটার মাঝে মাঝে হ্যাং করবে। যেকোনো প্রোগ্রাম বা সফটওয়্যার খুলতে বেশী সময় লেগে যাবে। কম্পিউটারের CPU কোরে অস্বাভাবিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি দেখা যাবে। ল্যাপটপের ক্ষেত্রে ব্যাটারির ব্যাকআপ কমে যাওয়ার সমস্যা দেখা যাবে।
(5) অনেকসময় কম্পিউটার ঠিকমতো খুলতে সমস্যা হবে। বুট কনফিগারেশন(BCD) মিসিং দেখাবে।
(6) কম্পিউটার চালু থাকা অবস্থায় হঠাৎ হ্যাং করে বন্ধ হয়ে গিয়ে মনিটর অথবা ডিসপ্লেতে নীল রঙের স্ক্রীনে কিছু লেখা দেখাবে। একে সাধারণত "Blue Screen error" সমস্যা বলে।
Blue Screen indicates that windows 10 has infected Source: Microsoft Community |
অ্যান্টিভাইরাস এবং অ্যান্টিম্যালওয়্যারঃ
আপনার মনে একটা প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক যে আমার কম্পিউটারে অ্যান্টিভাইরাস এবং অ্যান্টিম্যালওয়্যার দুটোই ইনস্টল করা আছে এবং সেগুলো নিয়মিত আপডেট হয়। তাহলে উইনডোজের অফিসিয়াল আপডেট না পেলে কি সমস্যা হবে?
উত্তর হলো হ্যাকররা প্রতিনিয়ত উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের দুর্বলতা খুঁজতে থাকে। এবং দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে সিস্টেম ফাইলগুলিকে ইনফেক্টেড করে। আপনার ডিভাইসে ইনস্টল করা অ্যান্টিভাইরাস এবং অ্যান্টিম্যালওয়্যার প্রোগ্রাম শুধুমাত্র ফাইলগুলির ইনফেকশনটিকে চিহ্নিত করে সাময়িক মেরামত করতে পারে। কিন্তু আপনার অপারেটিং সিস্টেমে থাকা দুর্বল ফাইলটিকে প্রতিস্থাপন করতে পারেনা। আপারেটিং সিস্টেম অ্যান্টিভাইরাসকে সেই অনুমতি দেয় না। তখন ওই দুর্বল ফাইলগুলির প্রতিস্থাপনের কাজ করে অপারেটিং সিস্টেমের আপডেট। অপারেটিং সিস্টেমের দুর্বলতাকে চিহ্নিত করে সেগুলিকে আগাম সংশোধনের কাজ অপারেটিং সিস্টেম আপডেটের মাধ্যমে ক্রমাগত চলতেই থাকে।
Windows 10 এর আপডেট এবং সাপোর্ট কেন বন্ধ হবেঃ
মাইক্রোসফট চাইছে বেশী সংখ্যক Windows অপারেটিং সিস্টেম ব্যাবহারকারীদের কাছে তাদের Windows 11 অপারেটিং সিস্টেম পৌছে দিতে। Windows 11 একটি অত্যাধুনিক অপারেটিং সিস্টেম। Windows 11 কিন্তু Windows 10 এবং তাঁর পূর্ববর্তী অপারেটিং সিস্টেমগুলি মত পুরোনো এবং লো-এন্ড ফিচার যুক্ত ডেক্সটপ অথবা ল্যাপটপে ইনষ্টল করা যায় না। Windows 11 ইনষ্টল করার জন্যে যে টেকনিক্যাল শর্ত এবং যোগ্যতাগুলি পূরণ করতে পারলে তবেই আপনার কম্পিউটারে ইনষ্টল হবে অথবা পুরোনো অপারেটিং সিস্টেম থেকে আপগ্রেড হবে।
এখন দেখা যাচ্ছে অধিকাংশ Windows 10 অপারেটিং সিস্টেমে চলা কম্পিউটার Windows 11-এ আপগ্রেড করার জন্য নুন্যতম প্রয়োজনীয় শর্তগুলি পূরণ করতে পারছে না। ফলে এই কম্পিউটার ব্যবহারকারীরা Windows 10-এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে যাচ্ছেন এবং Windows 11 এর প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।
ইতিমধ্যে পৃথিবী জুড়ে AI এর ব্যাবহার ক্রমাগত বেড়েই চলছে। AI এর প্রতিযোগিতায় পাল্লা দেওয়ার জন্যা আজ প্রায় প্রতিটি সফটওয়্যার সংস্থা তাদের ইউজারদের জন্য সফটওয়ারে AI ব্যাবহারের সুবিধা দিচ্ছে। AI বেসড সফটওয়্যার ব্যাবহার করার জন্যে ইউজারদের কম্পিউটারে আরো বেশী হাই এন্ড গ্রাফিক্স, প্রসেসর, স্টোরেজ, সিস্টেম মেমরী, এবং এনক্রিপশনের সুবিধার প্রয়োজন। তাই নতুন রিলিজ হওয়া সফটওয়্যার গুলি সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য কম্পিউটারে আগের তুলনায় আরো উন্নত মানের হার্ডওয়্যার এবং অত্যাধুনিক অপারেটিং সিস্টেমের প্রয়োজন।
প্রযুক্তির প্রতিনিয়ত উন্নতি হচ্ছে। শীঘ্রই AI এর মাধ্যমে Prompt লিখেই ভিডিও তৈরী করা যাবে। সত্যি কথা বলতে ব্যাবহারকারীদের চাহিদা মেটানোর জন্যে এখন Windows 11 যথেষ্ট নয়। সফটওয়্যার সংস্থাগুলি এখন মাইক্রোসফটের Windows 12 অথবা পরবর্তী উন্নত অপারেটিং সিস্টেমের জন্য অপেক্ষায় বসে আছে। আবার অনিচ্ছাসত্ত্বেও সফটওয়্যার সংস্থাগুলিকে Windows 10 অপারেটিং সিস্টেমের জন্যে সফটওয়্যার তৈরী করতে হচ্ছে কারণ বিপুল সংখ্যক কম্পিউটার ব্যাবহারকারী এখনো Windows 10 অপারেটিং সিস্টেম ব্যাবহার করছেন।
সম্ভবতঃ এই সব কারণেই মাইক্রোসফট তাদের ব্যাবহারকারীদের বাধ্যতামূলকভাবে Windows 10 থেকে Windows 11 -এ আনার জন্যে Windows 10 এর আপডেট পুরোপুরি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
Windows 10 এর End Support তারিখের পরে কি কম্পিউটার ব্যাবহার করা যাবে না?
Windows 10 "এন্ড সাপোর্ট" সার্ভিস মানে এই নয় যে 2025 সালের অক্টোবর মাসের 14 তারিখের পর থেকে আপনার কম্পিউটার কাজ করা বন্ধ করে দেবে। কারণ এটা "মেইনস্ট্রিম এন্ড ডেট", এর পরে আসবে "এক্সটেন্ডেড এন্ড ডেট"।
"এক্সটেন্ডেড এন্ড ডেট" -তারিখ পর্যন্ত আপনার পিসি (ল্যাপটপ অথবা ডেক্সটপ) নিশ্চয়ই ব্যাবহার করা যাবে যেমন আগে ব্যাবহার করেছেন। কিন্তু আগের থেকে কিছুটা পার্থক্য থাকবে।
একটা বাস্তবমুখী উদাহরণ দিয়ে বলছি যখন আপনি ফ্লাইটে রয়েছেন তখন আপনাকে আপনার লাগেজ নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে হবে না। কিন্তু যখন আপনি লোকাল বাসে চড়েছেন, তখন বাসের ভেতরে লেখা দেখতে পাবেন "নিজের মাল নিজের দায়িত্বে রাখুন"।
সুতরাং পার্থক্য এখানেই যে সাপোর্ট শেষ হওয়ার পরে আপনাকে সাবধানে এবং সতর্কতার সঙ্গে আপনার কম্পিউটার ব্যাবহার করতে পারবেন।
Windows 10 -এর আপডেট এবং সাপোর্ট কি বাড়ানো যাবে?
হ্যাঁ বাড়ানো যাবে। মাইক্রোসফটের ঘোষণা অনুসারে Windows 10 -এর End Support তারিখের পর থেকে আরো তিন বছর পর্যন্ত সিকিওরিটি আপডেট পাওয়া যাবে। কিন্তু ওই যে লোকাল বাসে লেখা থাকে "তিন বছরের উর্ধে ভাড়া লাগবে"। এখানেও তিন বছর পর্যন্ত বর্ধিত সিকিউরিটি আপডেট পাওয়ার জন্যে মাইক্রোসফটকে নিদিষ্ট অঙ্কের টাকা পেমেন্ট করতে হবে।
Windows 10 - এর End of Life বিষয়টি কি?
কোনো Windows Operating System -এর End of Life বলতে বোঝায় "এক্সটেন্ডেড এন্ড ডেট" কে। ওই তারিখের পরে থেকে অপারেটিং সিস্টেমের জন্য কোনো রকমের আপডেট এবং টেকনিক্যাল সাপোর্ট মাইক্রোসফট থেকে দেওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। শুধু তাই নয় End of Life তারিখের পরে ওই অপারেটিং সিস্টেমে নতুন কোনো সফটওয়্যার এবং সফটওয়ারের আপডেট ভার্সন ইনষ্টল হবে না। ফলে কম্পিউটারে আগে থেকে ইনষ্টল করে রাখা বিভিন্ন সফটওয়্যার যেমন ব্রাউজার, অ্যান্টিভাইরাস এবং অ্যান্টিম্যালওয়্যার ঠিকমত কাজ করবে না। তখন অপনার কম্পিউটারে অনলাইনে কাজ করতে অথবা অন্য কোন কারণে ইন্টারনেট ব্যাবহার করতে গেলে নিরাপত্তার সংকট দেখা দেবে।
এখনো পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুসারে বর্ধিত আপডেটের তিন বছর হওয়ার পরে 2028 সালে Windows 10 -এর এক্সটেন্ডেড এন্ড ডেট বা End of Life ঘোষণা হতে পারে।
তবে এখানে বলে রাখা দরকার যে, Windows 10 - এর End of Life পরেও কিন্তু আপনার কম্পিউটার বন্ধ হয়ে যাবে না। তখন আপনি আপনার Windows 10 কম্পিউটারে অফলাইনে কিছু কাজকর্ম করতে পারবেন। যেমনঃ ই-বুক পড়া, গান শোনা, সিনেমা দেখা, কম্পিউটার শেখানো, গুরুত্বপূর্ণ ফাইল স্টোর করে রাখা, গবেষণা করা ইত্যাদি।
Windows 10 এর আপডেট এবং সিকিউরিটি সাপোর্ট সার্ভিস বন্ধ হয়ে গেলে কি করবেন?
2025 সালের অক্টোবর মাসের 14 তারিখের পর Windows 10 এর আপডেট এবং সিকিউরিটি সাপোর্ট সার্ভিস বন্ধ হয়ে গেলে আপনি যা করতে পারেন সে বিষয়ে নীচে আলোচনা করা হলো
(i) অপারেটিং সিস্টেমকে Windows 11-এ আপগ্রেড করুনঃ
যদি আপনি কম্পিউটারে নিয়মিত বিভিন্ন হাই এন্ড সফটওয়্যার ব্যাবহার করেন,অনলাইন ব্যাঙ্কিং এবং এনক্রিপশন সংক্রান্ত কাজকর্ম করে থাকেন, তাহলে অবশ্যই আপনার কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেমকে Windows 10 অথবা Windows-এর পুরোনো ভার্সন থেকে Windows 11 তে আপগ্রেড করাতে হবে। এই কাজটি করার জন্য আপনাকে প্রথমে মাইক্রোসফট উইনডোজের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে Get Windows 11 অপশনে ক্লিক করতে হবে।
সরাসরি যাওয়ার জন্য লিঙ্কঃ https://www.microsoft.com/en-us/windows/get-windows-11
এবার Check for compatibility অপশনে ক্লিক করুন। এবং তারপরে Open Setting অপশনে ক্লিক করুন। এবার আপনার কম্পিউটারের আপডেট সেটিং উইন্ডো খুলবে।
আপডেট উইন্ডো খোলার পর যদি আপনি মোটামুটি উপরে দেখানো ছবিটির মত Upgrade করার নোটিশ দেখতে পান তাহলে বুঝবেন আপনার কম্পিউটার Windows 11 -এ আপগ্রেড হওয়ার জন্য একদম তৈরী আছে এবং এবার শুধু আপগ্রেড প্রক্রিয়া শুরু করার জন্যে Download and install অপশনে ক্লিক করুন। তবে মনে রাখবেন আপগ্রেড করার সময় হাইস্পিড আনলিমিটেড ইন্টারনেট এবং নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রয়োজন।
কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আপডেট উইন্ডো খোলার পরে যদি আপনি উপরে দেখানো ছবিটির মত আপগ্রেড অপশন খুঁজে না পান অথবা নীচের এই ছবিটির অবস্থা দেখতে পান তখন কি করবেন?
এক্ষেত্রে পুনরায় মাইক্রোসফট উইন্ডোজের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে Windows PC Health Check সফটওয়্যারটি ডাউনলোড করে আপনার কম্পিউটারে ইনস্টল করুন। সরাসরি ডাউনলোড করার লিঙ্কঃ https://go.microsoft.com/fwlink/?linkid=2169346
ডাউনলোড এবং ইনষ্টল হওয়ার পরে Windows PC Health Check অ্যাপলিকেশন Open করুন। PC Health Check খোলার পরে Check Now অপশনে ক্লিক করুন।
এবার যদি আপনি ওপরের এই ছবিটির মত "This PC meets windows 11 requirements" লেখাটি দেখতে পান তাহলে বুঝবেন আপনার ডেক্সটপ অথবা ল্যাপটপকে আপগ্রেড করা সম্ভব। এরপরে আপগ্রেড করার জন্যে উইন্ডোজের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে Windows 11 Installation Assistant ডাউনলোড করে রান করুন।
যদি আপগ্রেড করা সম্ভব না হয় তখন কি করবেন?
এখন Windows PC Health Check অ্যাপলিকেশন Open করার পরে যদি দুর্ভাগ্যবশত নীচের ছবিটির মত "This PC doesn't currently meet Windows 11 system requirements" তখন কি করবেন?
এই পরিস্থিতিতে অবশ্যই আমাদের লড়াই অপারেটিং সিস্টেমের সঙ্গে, কিন্তু কম্পিউটারের সঙ্গে নয়। তাই আপনাকে এখন ওই ডানদিকে থাকা স্ক্রলবার টাকে ওঠা নামা করে রেজাল্ট গুলো দেখতে হবে। এবং দেখতে হবে সমস্যাটা কোথায়? কোন Requirement গুলোর ক্ষেত্রে আপনার সিস্টেম পাশ করেনি।
- রেজাল্টে যদি দেখা যায় যে, আপনার সিস্টেমের RAM (System memory) এবং Hard Disk (System storage) দুটোই অথবা এই দুইয়ের মধ্যে যে কোনো একটি প্রয়োজনের তুলনায় কম আছে তাহলে আপনার কাছে এখনো সুযোগ আছে। আপনি আপনার কম্পিউটারের RAM এবং Hard Disk পরিবর্তন করে নতুন লাগাতে পারবেন যা Windows 11 এ সাপোর্ট করবে।
- এবার রেজাল্টে যদি দেখা যায় যে শুধুমাত্র Secure Boot এবং TPM 2.0 এই শর্ত দুটি অথবা দুটির মধ্যে যেকোনো একটি শর্ত পাশ করেনি। তাহলে সেক্ষেত্রে কম্পিউটারের BIOS-এ গিয়ে Secure Boot এবং TPM 2.0 এনএবেল অথবা অন করতে হবে। কিভাবে Secure Boot এবং TPM 2.0 কে চালু করবেন এর ওপরে অসংখ্য ভিডিও ইউটিউবে পাবেন। এছাড়া আমরা এর ওপরে পরবর্তীকে ব্লগ প্রকাশ করবো। Windows 10 বাজারে আসার পরে যতগুলি ডেক্সটপ এবং ল্যাপটপ বিক্রি হয়েছিলো সেগুলির প্রায় সবকয়টিতেই Secure Boot এবং TPM 2.0 সুবিধা আছে। কিন্তু যদি দেখা যায় যে কোনোভাবেই কম্পিউটারে Secure Boot এবং TPM 2.0 চালু করা যাচ্ছে না, তাহলে সেক্ষেত্রে Rufus দিয়ে একটি 16GB USB পেন ড্রাইভে Windows 11 ইনষ্টলেশন মিডিয়া বানিয়ে বাইপাস করে Windows 11-ক্লিন ইনষ্টল করা যেতে পারে।
- এখন যে পরিস্থিতির কথা বলা হবে সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি দেখা যায় যে যদি আপনার কম্পিউটারের Processor (CPU) এবং Processor Core (CPU Core) এই দুটি অথবা এই দুটির মধ্যে যেকোনো একটি Windows 11 ইনষ্টলের জন্য প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণের পরীক্ষায় পাশ করতে পারেনি তাহলে কি করবেন?
(i) Windows 11 LTSC ইনস্টল করুনঃ
Microsoft Windows এর পক্ষ থেকে সদ্য রিলিজ হওয়া Windows 11 LTSC Enterprise ভার্সনটি Winodws 11 অপারেটিং সিস্টেম থেকে অনেক সহজ, সরল এবং কার্যকারী। এবং Windows 11 LTSC ইনস্টল করার জন্য প্রয়োজনীয় সিস্টেম শর্তাবলী গুলি Windows 11 -এর তুলনায় অনেক কম এবং সহজ। Windows 11 LTSC সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ার জন্যে এখানে ক্লিক করুনএখানে ক্লিক করুন।
(ii) CPU কে আপগ্রেড করুনঃ
যদি আপনি তিন বা চার বছর আগে আপনার ডেক্সটপ অথবা ল্যাপটপ কিনে থাকেন তাহলে আপনি তার প্রসেসর(CPU) আপগ্রেড করতে পারেন। অর্থাৎ প্রসেসর বদলে নতুন Windows 11 support করা প্রসেসর ইনষ্টল করতে পারেন। । কিন্তু শুধু প্রসেসর বদলালেই চলবে না। সেটাকে আপনার কম্পিউটারের মাদারবোর্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হচ্ছে কি না সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কম্পিউটারের প্রসেসের আপগ্রেডেশন একটি জটিল প্রক্রিয়া। এটা করতে যথেষ্ট কারিগারি দক্ষতার প্রয়োজন হয়। যদি CPU আপগ্রেড করার আগে অবশ্যই একজন দক্ষ এবং অভিজ্ঞ কম্পিউটার হার্ডওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের পরামর্শ নেবেন।
![]() |
A technician is applying thermal compund on Processor Image source: flickr |
(iii) বাইপাস ক্লিন ইনষ্টল করুনঃ
আপনি Rufus আপ্লিকেশন দিয়ে একটি 16 GB মেমরির পেনড্রাইভে Windows 11 Bootable Istallation Media বানিয়ে নিন। তারপরে রিবুট করে আপনার কম্পিউটারে Windows 11 ক্লিন ইনষ্টল করুন। কিভাবে Windows 11 ক্লিন ইনষ্টল করতে হবে সে বিষয়ে সম্পূর্ণ একটি আলাদা ব্লগ পোষ্ট পাবলিশ হওয়ার পরে এখানে লিঙ্ক দেওয়া থাকবে।
ক্লিন ইনষ্টল করার পরে কয়েকদিন ব্যাবহার করে দেখুন যে Windows 11 আপনার কম্পিউটারে কেমন চলছে। যদি কাজ করার সময় অতিরিক্ত হ্যাং হয় এবং যদি প্রসেসর খুব তাড়াতাড়ি গরম হয়ে ওঠে তাহলে দেরী না করে পুনরায় Windows 10 -এ ফিরে আসুন অর্থাৎ কম্পিউটারে পুনরায় Windows 10 ইনষ্টল করে নিন।
(iv) অন্য অপারেটিং সিস্টেমে সুইচ করুনঃ
যদি আপনার ডেক্সটপ অথবা ল্যাপটপ কম্পিউটারে 32bit প্রসেসর(CPU) থাকে তাহলে দুঃখের সঙ্গে জানাতে বাধ্য হচ্ছি যে, মাইক্রোসফট আপনার কম্পিউটারের জন্যে উইন্ডোজ ইলেভেনের মনের জানলা বন্ধ করে দিয়েছে।
windows 11 is no longer avilable for 32 bit system |
এখন প্রশ্ন হলো যদি আপনার কম্পিউটারে 32bit প্রসেসর থাকে অথবা 64bit প্রসেসর আছে কিন্তু Windows 11-এর জন্য যোগ্যতাপূরণ করতে পারছে না, তখন আপনি কি করবেন? এর উত্তরগুলো যেমন কঠিন তেমনি আশাব্যাঞ্জক হবে না। তার মধ্যে একটি বিকল্প হলো অন্য অপারেটিং সিস্টেমে সুইচ করা অর্থাৎ আপনার কম্পিউটারে উইন্ডোজ বাদে অন্য একটি অপারেটিং সিস্টেম ইনষ্টল করা। সেক্ষেত্রে উইন্ডোজের বিকল্প হিসাবে কম্পিউটারে লিনাক্স, গুগোল ক্রোম ফ্লেক্স, ম্যাক, উবানটু, অ্যানড্রয়েড ইত্যাদি অপারেটিং সিস্টেম ইনষ্টল করা যেতে পারে।
কিন্তু, উইনডোজের বিকল্প অপারেটিং সিস্টেম ইনষ্টল করলেই হবে না, আপনার কম্পিউটারে বিকল্প অপারেটিং সিস্টেম কতটা কার্যকারী হবে এবং আপনি সহজে ব্যাবহার করতে পারবে কি না সেটাই একটা বড় প্রশ্ন। যদি আপনি কম্পিউটারকে ইন্টারনেটি ব্রাউজিং, সোশ্যাল মিডিয়া সার্ফিং, এক্সেল এবং প্রেজেন্টেশনের কাজে ব্যাবহার করে তাহলে আপনি সহজেই গুগোল ক্রোম ফ্লেক্স ওএস হিসাবে ব্যাবহার করতে পারবেন। আর যদি কম্পিউটারে আপনি বিভিন্ন জটিল কাজ যেমন সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, গেমিং , মিউজিক এবং ভিডিও এডিটিং ইত্যাদি করে থাকেন তাহলে তার জন্যে আপনাকে বিকল্প হিসাবে লিন্যাক্স অথবা ম্যাক অপারেটিং সিস্টেম ইনষ্টল করতে নিতে হবে।
দীর্ঘদিন ধরে একধরনের ইন্টারফেসে কাজ করতে করতে আমরা একটা অভ্যাস এবং কমফোর্ট জোন তৈরী করে নিই। ফলে আমাদের নতুন অপারেটিং সিস্টেমে নিজেকে পুরোপুরি মানিয়ে নিতে অনেকটা সময় লেগে যায়। আরো একটা সমস্যা থাকে যেমন কিছু কিছু সফটওয়্যার আছে যেগুলো শুধুমাত্র উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে ব্যাবহার করার তৈরী হয়। ফলে অন্য অপারেটিং সিস্টেমে সুইচ করলে ওই সফটওয়্যারগুলো দিয়ে কাজ করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। সেক্ষেত্রে ভার্চুয়াল অপারেটিং সিস্টেমের সাহায্য নিতে হয়।
(v) কিছুই করবেন নাঃ
যদি আপনি কম্পিউটারে ওয়েবসাইট সাফিং করেন, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যাবহার করে, ওয়ার্ড, এক্সেল, পাওয়ার পয়েন্টের কাজ করেন এবং লো-এন্ড গেমিং করেন তাহলে Windows 10 এর আপডেট এবং সিকিউরিটি সাপোর্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরেও আপনার কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেম Windows 10 -এ আপনার কাজকর্ম চালিয়ে যেতে পারবেন যতদিন না Windows 10 তার End of Life (Extended End Date) -এর তারিখ অতিক্রম করছে। তবে আপনাকে একটি পেইড অ্যান্টিভাইরাস কম্পিউটারে ইনস্টল করে নিতে হবে। এবং এই কম্পিউটারে আপনাকে অনলাইন ব্যাঙ্কিং সংক্রান্ত কাজকর্ম যতটা সম্ভব কম করতে হবে।
(vi) অপেক্ষা করুন, তারপরে নতুন কিনুনঃ
"লাস্ট বাট নট দ্য লিস্ট" পরামর্শ এই যে সোশ্যাল মিডিয়া, ইউটিউব ইত্যাদি মাধ্যমে ছড়ানো খবরে ব্যাস্ত না হয়ে ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করুন। দেখুন যে মেইন স্ট্রিম এন্ড ডেট অর্থাৎ 2025 সালের অক্টোবর মাসের 14 তারিখের পর কি হচ্ছে। ইতিমধ্যে নতুন কম্পিউটার কেনার জন্যে বাজেট তৈরী করতে থাকুন । End of Life (Extended End Date) -এর তারিখ পর্যন্ত Windows 10 কে ব্যাবহার করুন। তারপরে পছন্দমত নতুন কম্পিউটার যেমন ল্যাপটপ, ডেক্সটপ, ট্যাবলেট অথবা অল ইন ওয়ান কিনুন।
এই ব্লগটি লিখেছেন ব্লগার কৌশিক সরকার, এই লেখাটি সম্পর্কে আপনার মতামত লিখতে নীচে কমেন্ট করুন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন