ডিজিটাল আসক্তি কাটাতে ডিজিটাল ডিটক্স বা ডিজিটাল উপোসের পদ্ধতিগুলো কি কি?
বিভিন্ন ধর্মীয় এবং সামাজিক অনুষ্ঠানে আমারা উপোস করে থাকি। এবং এটা প্রমাণিত হয়েছে এই উপোস করার ফলে আমাদের শরীরের দূষিত কোষগুলি সহজে ধ্বংস হয়ে থাকে। প্রতিমাসে একবার অথবা দুইবার উপোস করলে শরীরে বিশেষ কোনো ক্ষতি হয় না।
![]() |
Digital Detox Image by freepik |
ডিজিটাল উপোসের ধারণাঃ
যদি আপনাকে বলা হয়ে যে, আপনাকে কোনো এক মাসে একদিন অথবা দুইদিন আপনার মোবাইল এবং যেকোনো কম্পিউটার ডিভাইস থেকে সম্পূর্ণভাবে দূরে থাকতে হবে। আপনি কি পারবেন?....যদি আপনি এটা করতে পারেন তাহলেই বলা যাবে আপনি ডিজিটাল উপোস করতে পেরেছেন।
ডিজিটাল উপোসের করার বয়সসীমাঃ
ডিজিটাল উপোস করার কোনো নির্দিষ্ট বয়সসীমা নেই। যেকোনো বয়সী এবং যেকোনো পেশার মানুষ এটা পালন করতে পারেন।এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে কেন ডিজিটাল উপাস করতে যাবেন?
আপনি যখন প্রতিদিন আপনার মোবাইল বা কম্পিউটারের মাধ্যমে ইন্টারনেট বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যাবহার করতে থাকেন তখন আপনার মাথায় ক্রমাগত ভালো এবং খারাপ তথ্যগুলি ঢুকতে থাকে ফলে আমাদের মস্তিষ্কের ভেতরে এমন জট পাকিয়ে যায় যে আমাদের সঠিকভাবে চিন্তা করার ক্ষমতা, ধৈর্য সহকারে তথ্য বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাগুলো কমে যেতে থাকে।আমাদের মস্তিষ্ক যখন তথ্যবিশ্লেষণ না করেই কোনো দ্রুত কোনো সিদ্ধান্তে পৌছানোর পরে দ্রুত ডোপামিন ক্ষরণ করে তখনই আমরা আসক্ত হয়ে পড়ি। আমরা আমাদের স্মার্টফোন বা কম্পিউটারে কেন ইন্টারনেট ব্যাবহার করছি তা না জেনেই ঘন্টার পর ঘন্টা ব্যাবহার করে চলেছি। হাইপারলিঙ্কে ক্লিক করে এক অদৃশ্য মায়ার জালের এক প্রান্ত থেকে এক প্রান্তে ছুটে চলছি। কিসের সন্ধানে চলছি? তথ্যের সন্ধানে। সেই তথ্য পাওয়ার পরে যারা সেটাকে বিশ্লেষণ করে কাজে লাগাতে পারে তারা সফল হয়ে। বাকিরা তথ্যবিশ্লেষণ না করেই ডোপামিনে আসক্ত হয়ে পড়ে। এই আসক্তি কমানোর জন্যই আমাদের ডিজিটাল উপোস করতে হবে।
ডিজিটাল উপোস কতক্ষণ ধরে করতে হবে?
ডিজিটাল উপোস আপনাকে নুন্যতম এক ঘন্টা করতেই হবে। ডিজিটাল উপোসের সর্বাধিক সময়ের কোনো সীমা নেই। আপনি আপনার সধ্যমত বারো ঘন্টার বেশী যতখুশি ঘন্টা, দিন, সপ্তাহ, মাস এবং বছর পর্যন্ত করতে পারেন। যদি ভবিষ্যতে আপনি ডিজিটাল সন্ন্যাস নিতে চান তাহলে ডিজিটাল উপোসের অভিজ্ঞতা আপনাকে অনেক সাহায্য করবে।
ডিজিটাল উপোসের সময় স্মার্টফোন ছাড়া সবার সঙ্গে জরুরী যোগাযোগ কিভাবে হবে?
এরকম যদি মনে হয় যে ডিজিটাল উপোসের সময় আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ ফোন আসতে পারে বা আপনাকে জরুরী দরকারে ফোন করতে হতে পারে, তাহলে সেক্ষেত্রে একটি কিপ্যাড যুক্ত বেসিক ফোনে আপনার সিম ভরে নিন। এখন 4G বেসিক ফোন কিনতে পাওয়া যায়। সুতরাং যোগাযোগের ক্ষত্রে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।
ডিজিটাল উপাসের সময় কোন কোন জনিস থেকে দূরে থাকতে হবে?
ডিজিটাল উপোস চলাকালীন যেকোনো ডিজিটাল ডিভাইস থেকে দূরে থাকতে হবে। স্মার্টফোন এবং ল্যাপটপ ব্যাবহার করা যাবে না।ডিজিটাল উপোস কবে এবং কখন করা উচিত?
ডিজিটাল উপোস করার কোনো নিদিষ্ট দিনক্ষণ তবে কিছু বিশেষ সময় এবং পরিস্থিতিতে ডিজিটাল উপোস করলে ভালো ফল পাবেন। যেমন -(i) একটি দীর্ঘমেয়াদি ছুটিতে থাকার সময়। যেমনঃ পূজার ছুটি, গ্রীষ্মকালীন ছুটি ইত্যাদি।
(ii) দীর্ঘদিন পরে বাড়িতে ফিরে আত্মীয় স্বজন, বন্ধু-বান্ধব এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে একসাথে কয়েকদিন থাকার সময়।
(ii) বাড়িতে পারিবারিক ,ধর্মীয় অথবা যেকোনো বিশেষ অনুষ্ঠান পালনের সময়।
(iii) কোনো প্রাকৃতিক পরিবেশে ভ্রমণে গেলে। নিজের দুচোখে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করুন।
(iv) মাল্টিপ্লেক্স বা সিনেমাহলে মুভি দেখার সময়।
(v) শারীরিক অসুস্থতার সময়।
(vi) বই পড়া, ছবি আঁকা, ডিজাইনিং সংক্রান্ত কাজের সময়।
(vii) এছাড়া কর্মচ্যূত হওয়া, সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যার সৃষ্টি হলে।
ডিজিটাল উপবাসের সময় একঘেয়ামি কাটাতে যা করবেনঃ
![]() |
পরিবারের সকল সদস্যদের সঙ্গে বসে খাওয়া দাওয়া করা এবং গল্প করা ডিজিটাল উপবাসের একটি বিশেষ অংশ ছবির সূত্রঃ Leonardo AI |
(ii) বাড়ির ছোট থেকে বড় সকল সদস্যদের সঙ্গে কথা বলুন, তাদের সঙ্গে গল্প করুন।
(iii) বন্ধু-বান্ধব থাকলে তাদের সঙ্গে দেখা করুন। এবং তাদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করুন।
(iv) আপনার বাড়িতে অথবা বাড়ির পাশে কোনো গাছপালা থাকলে তাদের নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করুন।
(v) অফলাইনে যেমন স্থানীয় বাজার থেকে ক্যাশ পেমেন্ট দিয়ে কিছু কেনাকাটা করুন।
(vii) হালকা শরীরচর্চা বা খেলাধুলা করতে পারেন। তবে দীর্ঘদিন অভ্যাস না থাকলে উপেক্ষা করুন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন