বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাব এবং কিছু আগাম আশঙ্কা - জানা দরকারি - Jana Dorkari

Breaking

Search


বৃহস্পতিবার, ৬ মার্চ, ২০২৫

বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাব এবং কিছু আগাম আশঙ্কা

বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য যুদ্ধের সুদূরপ্রসারী প্রভাব এবং কিছু আগাম আশঙ্কা



ডিজিটাল ডেস্কঃ 
2025 সাল আসার সাথে সাথে দুনিয়াটা কেমন বদলে যাচ্ছে। আর এই পরিবর্তনগুলো এত দ্রুত হচ্ছে যে বিশ্বজুড়ে সাধারণ মানুষ কিছু বোঝার আগেই যেন নতুন কোন বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে যাচ্ছে। এর শুরু অবশ্যই হয়েছে আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোলান্ড ট্রাম্পকে দিয়ে। প্রায় প্রতিদিনই তিনি আমেরিকা থেকে নতুন নতুন ঘোষণার মাধ্যমে বিশ্বের অধিকাংশ মানুষের চিন্তার মধ্যে ঢুকে পড়েছেন। যার মধ্যে অন্যতম হলো পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ওপরে বাণিজ্য শুল্ক আরোপ। এছাড়াও আছে অমেরিকার অবৈধ অভিবাসীদের হাতকড়া পরিয়ে দেশে ফেরানো,রাশিয়া ইউক্রেনের মধ্যে শান্তি স্থাপনের জন্য ইউক্রেনের সঙ্গে খনিজ সম্পদ সম্পর্কিত চুক্তি নিয়ে বিতর্ক ইত্যাদি ইত্যাদি।

ওদিকে চিনও পিছিয়ে নেই। তারা ইতিমধ্যেই ডিপফেক চ্যাট বট মার্কেটে এনে আমেরিকার টেক ইন্ডাষ্ট্রিকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে। এছাড়া শোনা যাচ্ছে যে বড় বড় বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের জন্য চিনকে তাদের গন্তুব্য হিসাবে বেছে নিচ্ছেন। ফলে এখন প্রায় প্রতিদিন পৃথিবীর বিভিন্ন শেয়ার বাজারে বড়সড় পতন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আবার চিন আমেরিকাকে হুমকি দিচ্ছে যে তারা যেকোনো যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত।

তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে এর মধ্যে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো বাণিজ্যশুল্ক। যার ওপরে পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশেরই অর্থনীতিতে প্রভাব পড়ে। শুল্ক আরোপের মাধ্যমে বাজারে বিদেশী দেশের পণ্যের চাহিদার হেরফের ঘটিয়ে দেওয়া যায়। প্রাচীন কাল থেকেই এই দুনিয়ার অর্থনীতি ব্যাবসা বাণিজ্য অর্থাৎ লেনদেনের ওপরে নির্ভরশীল। বর্তমানে পরিবর্তনশীল বিশ্বে যে কোনো দেশই একশো শতাংশ আত্ননির্ভরশীল হতে পারবে না। তাদের নিজেদের দেশের চাহিদা পূরণের জন্য আমদানি রফতানি করতে হবে। আমেরিকা এই যে বাণিজ্য শুল্ক আরোপের প্রথা প্রবর্তন করলো এতে উন্নয়নশীল এবং অনুন্নত দেশগুলি আগামীদিনে বড়সড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে চলছে। বিশেষ করে এই প্রশ্ন তোলা যায় যে আজ যেভাবে আমেরিকা বাণিজ্য শুল্ক আরোপ শুরু করেছে তাতে আগামীদিনে বাকি উন্নত দেশগুলি একইভাবে শুল্ক আরোপের খেলায় কি মেতে উঠবে?

এটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে উন্নয়নশীল ভারত, ব্রাজিল, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ইত্যাদি দেশগুলির অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আগামী দিনে আরো কঠিন হতে চলেছে। এই বাণিজ্য ট্যারিফের জাঁতাকলে পড়ে হয়ত তারা উন্নত দেশ হবে অথবা অনুন্নত দেশে পরিবর্তিত হবে। দুনিয়াজুড়ে অর্থনৈতিক ভাবে মধ্যবর্তীদের এখন অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে এবং আরো হতে হবে। এমনও হতে পারে যে উন্নতশীল দেশগুলি তাদের অর্থনীতির ভারসাম্যকে টিকিয়ে রাখার জন্যে উন্নত দেশগুলি থেকে বড়সড় লোন নিতে বাধ্য হবে। এরফল স্বরূপ উন্নত দেশগুলির সঙ্গে সঙ্গে উন্নতশীল দেশগুলি অনুন্নত দেশগুলির ওপরে অত্যাধিক হারে বাণিজ্য শুল্ক বসাতে শুরু করবে। 

অর্থের অভাবের চিন্তা ব্যাক্তি থেকে দেশ পর্যন্ত তাড়া করে বেড়ায়। আর্থিক দুশ্চিন্তা মানবজাতির দুর্বলতার মধ্যে অন্যতম। অনেক সময়ই যেকোনো গণতান্ত্রিক দেশে, দেশের অর্থনীতির কথা ভেবে দেশের শাসকগোষ্ঠী বিদেশী শাসকগোষ্ঠীর কাছে আপস করতে বাধ্য হয়। এই যে বাণিজ্য শুল্ক আরোপ করে বিশ্বজুড়ে যে বাণিজ্য যুদ্ধের সূচনা হয়েছে। এতে উন্নত দেশগুলি আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া দেশগুলির গুলির বাণিজ্যের ওপরে অধিক শুল্ক চাপিয়ে একাধিপত্যের কায়েম করার সম্ভাবনা থাকবে।

অনেকেই আজ প্রশ্ন করছে যে এই বাণিজ্য যুদ্ধ কি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনা তৈরী করতে পারে? যদিও উন্নত দেশগুলো একে অপরকে হুমকি দিচ্ছে, বাণিজ্য শুল্ক বসাচ্ছে, কিন্তু এতে প্রমাণ হয় না যে উন্নত দেশগুলির পরস্পরের মধ্যে মহাযুদ্ধের সম্ভাবনা তৈরী হচ্ছে। উলটে বলা যায় যে উন্নত দেশগুলি একত্রিত হয়ে পৃথিবীতে এক নতুন শাসনতন্ত্র আনতে চলেছেন। যার নাম বাণিজ্যতন্ত্র এবং আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মহাশয় এর উদ্ধোধন করেছেন। আমেরিকা, চীন, রাশিয়া একে অপরকে বাণিজ্য ট্যারিফ বসিয়ে যতই হুমকি দিক না কেন তাদের মধ্যে ব্যাবসা বাণিজ্য চলতেই থাকবে। কারণ ব্যাবসা বাণিজ্যের কূটনীতি ছাড়া বর্তমান পৃথিবীতে কোনো দেশ বা জাতির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। 

তাহলে কি উন্নয়নশীল এবং অনুন্নত দেশগুলি কি করবে? তারা কি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু করতে পারে? বাস্তবে কিন্তু এই সম্ভাবনা খুবই কম। কারণ উন্নয়নশীল এবং অনুন্নত দেশগুলির পরস্পরের মধ্যেই সংঘাত বিরোধ সবথেকে বেশী। এছাড়া অনুন্নত দেশগুলির শাসনব্যাবস্থা, অর্থনীতি আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে উন্নত দেশগুলির উপরে নির্ভরশীল। ফলে এদের কারোর পক্ষেই বিশ্বযুদ্ধ শুরু করা সম্ভব নয়। আর উন্নয়নশীল দেশগুলিও নিজেদের ভবিষ্যত অর্থনীতির কথা ভেবে উন্নত দেশগুলোর বিপক্ষে যেতে চাইবে না।

তবে উন্নয়নশীল দেশগুলির ভবিষ্যত রাষ্ট্রব্যাবস্থা নিয়ে একটা আশঙ্কা তৈরী হচ্ছে। এখন পৃথিবীর অধিকাংশ উন্নতশীল দেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যাবস্থা। কিন্তু উন্নত বিশ্বের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধের চ্যালেঞ্জের সঙ্গে মোকাবিলা করতে গিয়ে যদি এই উন্নয়নশীল দেশগুলি অর্থনৈতিক সমস্যায় ক্রমাগত ভুগতে থাকে তাহলে কি উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ধীরে ধীরে বাণিজ্যতন্ত্রের জোরালো হাওয়া বইতে শুরু করবে? উত্তর সময়ই বলবে
Blogger দ্বারা পরিচালিত.