আগামীদিনে কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ কেমন হতে চলেছে?
কৃত্রিমবুদ্ধিমত্তার ব্যাপকভাবে ব্যাবহার এবং তার ফলস্বরূপ বিভিন্ন সেক্টরে কর্মীসংখ্যার ক্রমাগত সংকোচন দেখে বিগত কয়েক বছর ধরে অনেকেই ভবিষ্যতের কর্ম ক্ষেত্র সম্পর্ক বিভিন্ন ধরনের ভবিষ্যতবাণী করেছেন। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে বিগত কয়েকদশক ধরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ওপরে গবেষণার পরে এখন এআই এর প্রভাব গবেষণাগার থেকে শুরু করে গৃহস্থের অন্দরমহলে ঢুকে গেছে। এবং এটা স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে যে, আগামী দিনে অবশ্যই কৃত্রিমবুদ্ধিমত্তা ব্যাবহার করে অনেক জটিল কাজ অনেক কম সময়ে করা সম্ভব হবে। এর ফলে আগামী দিনে বিভিন্ন জীবিকা ক্ষেত্রের সংকোচন প্রসারণ হবে।
যেহেতু বিশ্বের বড় বড় সংস্থাগুলি তাদের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য রোবট এবং কৃত্রিমবুদ্ধিমত্তার ওপরে বেশী গুরুত্ব দিতে শুরু করেছে, সেজন্য যে সমস্ত কাজকর্মে ক্রিটিকাল থিঙ্কিংয়ের প্রয়োজন হয়না বা খুব কম প্রয়োজন হয় সেই সমস্ত কাজের ক্ষেত্রগুলিতে মানুষের কাজের সুযোগ ধীরে ধীরে কমতে থাকবে। অনেকে উপদেশ দিয়েছেন যে, কৃত্রিমবুদ্ধিমত্তার যুগে টিকে থাকতে হলে মানুষকে বেশী দক্ষ এবং ক্রিয়েটিভ হতে হবে। কিন্তু এটা মানতে হবে যে যন্ত্রের মধ্যে যদি বুদ্ধিমত্তা তৈরী হয় তাহলে তারও ক্রিয়েটিভিটি একসময় বৃদ্ধি পেয়ে মানুষের সমতুল্য হয়ে যেতে পারে। তাহলে টিকে থাকার উপায়? প্রাকৃতিক উপায়ে সৃষ্ট মানুষের মধ্যে এখনো অনেক কিছু ইউনিক বৈশিষ্ট্য এবং গুণাগুণ আছে যা মানুষের তৈরী কৃত্রিমবুদ্ধিমত্তা এখনো অর্জন করতে পারেনি। মানুষের আবেগ এবং অনুভূতিগুলিকে সঠিকভাবে বোঝার মত কৃত্রিমবুদ্ধিমত্তা সৃষ্টি করতে এখনো অনেক গবেষণার প্রয়োজন।
যখনই উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার তাগিদ আসে তখনই প্রয়োজন হয় মানুষের আবেগ এবং অনুভূতি। উৎপাদিত পণ্য যদি মানুষের আবেগ এবং অনুভূতি স্পর্শ না করতে পারে তবে সেই পণ্য কখনই বাজারে সফল হয় না। যার জন্য প্রয়োজন বিজ্ঞাপন এবং মার্কেটিং ইত্যাদি। ভবিষ্যতে একটি রোবট বাজারে বিক্রি করতে গেলে আপনাকে অবশ্যই ক্রেতাদের মনে সেই রোবোটটি সম্পর্কে একটি আবেগীয় অনুভূতির সৃষ্টি করতে হবে। তাই মার্কেটিং পেশার ক্ষেত্রে আপনার অভিজ্ঞতা এবং কর্মদক্ষতা আপনাকে আগামীদিনে সফল এবং সন্মানজনক স্থানে নিয়ে যাবে।
আবার অনেক ব্যাক্তি বা সংস্থা মনে করেন যে তাদের উৎপাদিত পণ্য অথবা পরিষেবার মান উন্নত করলে তা বাজারজাত করার জন্য বেশী মার্কেটিং এবং অর্থ ব্যায় করতে হবে না। যদিও এই ধারণা ওপরে নির্ভর করে চললে পণ্য এবং পরিষেবা যথেষ্ট জনপ্রিয়ে এবং লাভজনক করা সম্ভব। কিন্তু এক্ষেত্রে দক্ষ এবং অভিজ্ঞ ব্যাক্তি দ্বারা পণ্য এবং পরিষেবার মান ক্রমাগত উন্নতি করতে হবে। ফলে ভবিষ্যতে এই দক্ষ ব্যাক্তিদের কাজের যথেষ্ট চাহিদা এবং প্রয়োজন থাকবে।
আগামীদিনে হিউম্যানয়েড রোবোটগুলির কার্যক্ষমতা অনেক উন্নতি হবে। ফলে চিকিৎসা এবং অতিথেয়তা শিল্পে এই রোবট গুলির বেশি মাত্রায় ব্যাবহার হবে। আপনারা নিশ্চয়ই দেখেছেন যে অধিকাংশ বড় শহরের রেস্টুরেন্টে রোবট খাবার পরিবেশনের কাজ করছে। অন্যদিকে এখন চিকিৎসাক্ষেত্রে অধিকাংশ উন্নত দেশে নিখুঁত শল্যচিকিৎসার কাজে রোবটিক আর্মের ব্যাবহার হচ্ছে। মানুষ যদি তার দায়িত্ববোধ, আবেগ অনুভূতিকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারে তাহলে ভবিষ্যতে উন্নততর প্রযুক্তির যুগেও চিকিৎসা এবং অতিথেয়তা শিল্পে যথেষ্ট পরিমাণে মানব সম্পদের চাহিদা থাকবে।
অদূর ভবিষ্যতে রোবট এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শিক্ষকতার জায়গা অনেকটাই দখল করে নেবে। ইতিমধ্যে পৃথিবীর অনেক স্কুল কলেজে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন রোবট শিক্ষকের মাধ্যমে শিক্ষাকতার প্রয়াস শুরু হয়ে গিয়েছে। অনেকে বলেছেন যে নতুন প্রজন্ম রোবট শিক্ষকের প্রতি আরো বেশী আগ্রহী হয়ে উঠছে। কিন্তু একটি উপযুক্ত এবং সুস্থ মানব সমাজ গঠনের জন্য মানব শিক্ষকের অবশ্যই প্রয়োজন এবং এই প্রয়োজনীয়তা ভবিষ্যতেও থাকবে। শিক্ষকদের আরো ধৈর্য্যশীল হতে হবে এবং তাদের ছাত্রদের মনের আবেগ এবং অনুভূতিগুলোকে বোঝার চেষ্টা করতে হবে। শুধুমাত্র পুঁথিগত জ্ঞানের আদানপ্রদানের কাজ এবং অভিজ্ঞতা নিয়ে ভবিষ্যতে মানব শিক্ষাকতা করা সম্ভব হবে না।
আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রন, নিরাপত্তা, নজরদারি এবং তদন্ত ইত্যাদি ক্ষেত্রে আগামীদিনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যাবহার বাড়বে। রাস্তায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রন এবং পথ নিরাপত্তার বিষয়গুলিতে রোবট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এছাড়া বিভিন্ন দেশের প্রশাসন সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রন এবং তদন্ত করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে সক্রিয়ভাবে কাজে লাগাবে। ভবিষ্যতে যে কোনো অপরাধের তদন্তে অপরাধী বা অপরাধীদের মনস্তত্ব বুঝতে সাহায্য করবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভবিষ্যতে যতই উন্নত হোক না কেন পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই প্রশাসনিক কাজকর্ম এবং ক্রিটিক্যাল সিদ্ধান্ত মানুষ দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হবে।
সামরিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন রোবোটিক সরঞ্জাম এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার শুরু হয়েছে। আগামী দিনে যুদ্ধক্ষেত্রে হয়ত হিউম্যানয়েড রোবটকে অস্ত্র হাতে দেখা যাবে। পরবর্তীকালে টেকনোলোজির আপডেটেড় সঙ্গে সঙ্গে হিউম্যানয়েড রোবটগুলির মধ্যে স্বয়ংক্রিয়তা এবং স্বাধীনভাবে চিন্তাভাবনা করার ক্ষমতা সৃষ্টি হতে পারে। যদি কোনো কারণে এই রোবটগুলো মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধাস্ত্র ব্যাবহার করতে করে, তাহলে মানবজাতির পক্ষে সেটা সুখকর হবে না।
আগামীদিনে আপনাকে চাকরি পাওয়ার জন্যে হয়ত নিয়োগকর্তাকে বিপুল অঙ্কের টাকা দিতে হবে। এটা নিয়োগকারী সংস্থাগুলি ট্রেনিং ফি হিসাবে দাবি করবে। এমনকি উন্নত দেশগুলিতে চাকরি এবং সেখানকার নাগরিকত্ব পাওয়ার আশায় অনেকে বিনা বেতনে কাজে যোগদান করবে। স্থায়ী বেতনযুক্ত চাকরি ক্রমশ কমে যাবে। পরিবর্তে ফুড ডেলিভারির মত ইনসেন্টিভ নির্ভর পেশার বৃদ্ধি হবে।